Daagi Artists

২০১৩ সালে খসড়া কিছু নিরীক্ষামূলক কাজের মহড়া দিয়ে শুরু, তারপর থেকে নানা বিচিত্রমুখী অনুশীলনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে দাগী আর্ট গ্যারেজ, ঢাকা কেন্দ্রিক সাত শিল্পীর সমবায়িক এবং পারস্পরিক সহযোগিতার সমঝোতায় গড়ে ওঠা একটি যৌথ প্রয়াস। বন্ধুত্ব ও সমভাবনার আঙ্গিকে ধীমান সরকার(জ-১৯৮৮), ইমরান সোহেল(জ-১৯৮৪), রাসেল চৌধুরী(জ-১৯৮৮), রুপম রায়(জ-১৯৮৫), সনদ বিশ্বাস(জ-১৯৮৬), সানজিদ মাহমুদ(জ-১৯৮৭) এবং সৈয়দ তারেক রহমান(জ-১৯৮৮) আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রুপ হিসেবে তাঁদের যাত্রা শুরু করেন একটি স্টুডিও নিয়ে, যেখানে পারস্পরিক সাক্ষাত তো বটেই, একই সাথে ব্যক্তিগত ও যৌথ কাজ, ভাবনার আদান-প্রদান, শিল্পসম্পৃক্ত প্রশ্নের সমাধান করেন তাঁরা একে অন্যকে উৎসাহ ও সহযোগিতা দিয়ে।

‘দাগী’ শব্দটি অর্থগত দিক হতে সাব্যস্ত হওয়া কোন অপরাধীকে বোঝায়। নাম নির্বাচনের মুন্সিয়ানাই বলে দেয় যে গ্রুপটি প্রচলিত শিল্পবোধকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে চায় এবং কাজের যে কোনরকম সমালোচনা গ্রহণে কোন দ্বিধা নেই তাঁদের। ১৯৪০ থেকে ১৯৬০ সাল নাগাদ গড়ে ওঠা ও সক্রিয় থাকা মুম্বাই এবং কলকাতা গ্রুপ এবং ’৮০ এর দশকে গড়ে ওঠা ঢাকা কেন্দ্রিক ‘সময়’ গ্রুপ(যা বর্তমানে নিষ্ক্রিয়) তাঁদের এক হবার মূল প্রেরণা। তারই প্রেক্ষিতে সমস্ত ব্যক্তিক চর্চার অপরিহার্যতাকে এড়িয়ে ঢাকার মগবাজারে একটি স্টুডিও ভাড়া নিয়ে সকলে মিলে একত্রে কাজ করে চলা।

নিজেদের মধ্যকার কথোপকথনে, সৃষ্টিশীল ভাবনার বিনিময়ে(সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা জনপ্রিয় কোন অ্যাপ ব্যবহার করে কখনও, যখন সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব নয়) গ্রুপটির সদস্যরা একে অন্যের মধ্যকার সমিল শিল্প-ভাবনাটিকে আবিষ্কার করেন এবং একটি যৌথতার প্রেরণা থেকে হাজির করেন শৈল্পিক প্রয়াসকে। এই প্রক্রিয়াটি কখনও সকলে মিলে, কখনও গ্রুপের মধ্যকার দুজনের দ্বৈত প্রয়াসে, কখনওবা তিনজনের চেষ্টায় হয়ে থাকে। প্রতিটি শিল্পী সদস্যই তাঁর ব্যক্তিক রুচি ও দৃষ্টিতে কাজটিতে অংশগ্রহণ করেন ঠিকই কিন্তু সর্বোপরি যৌথভাবে তাঁরা একটি নতুনতর গভীরতার অনুসন্ধান করেন, নিজেদের ব্যক্তি চিন্তার ব্যাপ্তিকে আরও প্রসারিত করে। বিচিত্র শিল্প-উপকরণ, টুলস, সমাপ্ত-অসমাপ্ত কাজ, বিক্ষিপ্ত সব উপাদান দিয়ে পরিপূর্ণ স্টুডিওটি সাক্ষ্য বহন করে তাঁদের ধারাবাহিক নিরীক্ষা ও যৌথ কর্মপদ্ধতির। তাঁরা অনুভব করেন এভাবে তাঁরা নিজেদের ভাবনার জায়গায় ঋদ্ধ হন, এবং একইসাথে যৌথভাবেও হয়ে ওঠেন শক্তিশালী।

‘দাগী’র বেশ কিছু যৌথ প্রয়াসই রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহকে আত্তীকরণ করেছে, যার একটি ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘ওয়াপন ক্যান্ট কিল’ নামে তাঁদের প্রথম গ্রুপ প্রদর্শনীটি করতে উদ্বুদ্ধ করে। প্রদর্শনীর শিরোনামটিকে একটি সাধারণ স্লোগানের জায়গা থেকে নিয়ে প্রত্যেক সদস্যই যার যার মত করে গ্রহণ করেন এবং ব্যক্তিগত অভিব্যক্তিতে শিল্প-রচনা করেন যা সর্বোপরি একটি যৌথ কাজ করার ক্ষেত্রে গ্রুপে সমন্বিতভাবেও অনুমোদিত ছিল । যদিও প্রত্যেক সদস্যেরই নিজস্ব চর্চা রয়েছে তারপরও ব্যক্তিগত চিন্তা থেকে আসা কোন কাজ যখন সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে পরিসমাপ্তির দিকে এগোয় এবং দাগী আর্ট গ্যারেজের কাজ হিসেবে প্রদর্শিত হয় তখন কোন সদস্যই সেটিকে অবশেষে আর নিজের কাজ হিসেবে দাবি করেন না বরং একে সার্বিকভাবে গ্রুপের যৌথ প্রচেষ্টা থেকে উঠে আসা একটি কাজ হিসেবেও দেখেন। তাঁরা তখনই তাঁদের কাজের প্রদর্শনী করেন যখন তাঁরা অনুভব করেন যে সেটি যৌথভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ কাজ হয়ে উঠেছে। তাঁদের যৌথ কাজের প্রদর্শনীর সংখ্যা সীমিত কিন্তু দীর্ঘ প্রতীক্ষাকে ফলপ্রসূ করেই পরিশেষে তা হয়।

দাগীর প্রত্যেক শিল্পীই ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের এই যৌথ উদ্যোগের বাইরেও ঢাকার কর্মময় শিল্পাঙ্গনে সক্রিয়ভাবে অবদান রাখছেন। তাঁদের মাঝে কয়েকজন ‘সামদানী আর্টিস্ট লেড ইনিশিয়েটিভ ফোরাম’এর (শিল্পীদের নেওয়া উদ্যোগ) এর সদস্য। সমস্ত প্রতিকুলতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ক’জন পেশাদার শিল্পীর সমস্ত যৌথ প্রয়াস এবং নিজেদের মধ্যকার সহযোগিতার পরিবেশ তাঁদেরকে প্রস্তুত করছে একটি গ্রুপ হিসেবে ক্রিয়াশীল থেকে তাঁদের নির্বাচিত পেশাতেই আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে এবং ব্যক্তি শিল্পী হিসেবে লড়তে।

DAAGI MEMBERS